আমরা কোথায় যাব ? --১
[[ ভাবতে যখন শুরু করি তখন এলোমেলো ভাবে অনেক কথা চলে আসে, স্মরণ শক্তির অভাবে সেগুলো অনেক সময়ে ভুলে যাই।
তাই লেখাটা কিছুটা অগোছাল হতে পারে, আগের কথা পরে, পরের কথা আগে চলে আসতে পারে। ]]
আমরা কোথায় যাব ? --১
আমার ভাবনা ঠিক এখন এই সময়তে এভাবে প্রকাশ করায়
ভুল বোঝার যথেষ্ট সম্ভাবনা ও সুযোগ আছে। ২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচন থেকে ২০১৪-র
লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত সবকটি নির্বাচনে সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারী কমিউনিস্ট
পার্টি হিসেবে ঘোষিত ও পরিচিত পার্টিগুলির পরাজয়ের যা বহর, তারপর মনে হতেই পারে
যে, এই পরাজয়ের ফলেই আমি এসব বলছি। তা যে নয় সে কথা আমার পরিচিত জনেরা জানেন। বিশেষত
২০১৪-র নির্বাচনের পর এই দলগুলোর অভ্যন্তরে যে কথাবার্তা-শোরগোল চলছে তারপর আশাকরি
আমার এই কথায় কেউ ভুল বুঝবেন না।
কোথায় আর বলব, শোনে তো না কেউ। শোনার ইচ্ছে এবং ধৈর্য কারও নেই।
তাই অনেক দ্বিধা সত্ত্বেও এখানেই শুরু করলাম।
এই
পার্টিগুলোকেও দেখি নির্বাচনে পরাজয়ের পর তাঁরা বিশ্লেষণ করতে বসেন। দোষ নেই। জয়ের
পর তাঁরা এহেন বিশ্লেষণ করেননা, সোজা-সাপটা বলে দেন, ‘এ জয় তাঁদের সাফল্যের জয়।
তাঁদের মতাদর্শ ও রাজনীতি যে সঠিক এই জয় তার প্রমাণ’।
২০০৯ নির্বাচনে
পরাজয়ের পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে নেতৃত্ব বদলের। ২০১১-এ বিধানসভা নির্বাচনে চেষ্টা
হল নতুন মুখকে প্রার্থী করার। ২০১৪-তেও এই বিষয়টাতেই গুরুত্ব দেয়া হল। পার্টির
নিচে থেকে ওপর পর্যন্ত সকলেই মনে করতে শুরু করলেন, নতুন মুখ আনলেই প্রার্থী জিতবে,
কিন্তু কোনো স্তরের কেউ সাধারণ মানুষের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেননি। সে ইচ্ছেও
তাঁদের ছিলনা। তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন যে মানুষ তাঁদের সংগেই আছেন। নিচের তলার কর্মী
এবং নেতারাও এ ব্যাপারে সতর্ক তো ছিলেনই না, অসতর্ক মুহূর্তেও তাঁরা মানুষের মুখের
ভাষা পড়তে পারেন নি। প্রসঙ্গক্রমে বলতে পারি অভিজ্ঞ মানুষেরা যাঁরা মানুষের মধ্যে
থাকেন তাঁদের কিন্তু পরিবর্তনের আবহাওয়া বুঝতে অসুবিধে হয়নি, বরং একদম ঠিক ঠিক
আভাস তাঁদের কাছে ছিল। তাঁরা সে কথা প্রকাশও করেছিলেন, কিন্তু সে কথা বিশ্বাস করার
অবস্থাতেই কেউ ছিলনা।
আসলে পরিবর্তন
শুরু ভেতরে ভেতরে হয়েছিল আরও দু’দশক আগে থেকেই। প্রথম প্রকাশ এসে ঠেকল ২০০৮-এর
পঞ্চায়েত নির্বাচনে। এই নির্বাচনে গ্রামাঞ্চলের রায় থেকে সাহসের রোগ ছড়িয়ে পড়ল
প্রায় সর্বত্র। পরবর্তি নির্বাচনে অপছন্দের ধাক্কা ধস নামিয়ে দিল।
২০১৪-র নির্বাচনের পর এ নিয়ে পার্টির উচ্চস্তরেনেতৃত্ব
বদলের জন্য শোরগোল পড়ে গেছে। নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রশ্ন যখন নানা মহলে এমনকি দলের
অভ্যন্তরেও উঠেছে তখন একথা স্পষ্টভাবে বলা উচিত কেন পরিবর্তন ? কেবলমাত্র নির্বাচনে পরপর পরাজয়ের
জন্য ?
যদি তাদের কর্মক্ষমহীনতার কথা ওঠে তবে তা আরো
আগেই ওঠা উচিত ছিল। যদি অযোগ্যতার কথা ওঠে তবে প্রশ্ন, নেতৃত্ব তো আকাশ থেকে আসেন না। দীর্ঘ
কাজের মধ্য দিয়ে যাচাই করে তাঁদের আনা হয়। তা হলে সেই যাচাইয়ে কি ভুল ছিল কোথাও ? শুধু নেতৃত্ব বদলই কি সমাধান ? প্রশ্ন
উঠেছে কমিটি ভেঙে দেয়ার, তাহলে তো গোটা পার্টিটাকেই ভেঙে দিতে হয়! একজন, দুজন, তিনজন নেতা বা নেত্রী কর্মক্ষমতা হারাতে পারেন, ভুল করতে পারেন
কিন্তু নেতৃত্বের বাকি বড় অংশ কী করছিলেন ?
আসল কথা হল, কর্মক্ষম যোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্য
কমিটি, উপযুক্ত পার্টি সবই হতে পারে যদি মতাদর্শ ঠিক থাকে এবং মতাদর্শকে রূপায়িত
করার জন্য সৎ ও সচেতন ধারাবাহিক কর্মপ্রবাহ থাকে। শুধু রুটিন মাফিক ধরাবাঁধা কিছু
কাজ দিয়ে হয়না। আপনাদের দলগুলোতে তা ছিল কি ? মতাদর্শের বাস্তব রূপায়নের জন্য কিছু কিছু কথা
মাঝে মাঝে উচ্চারণ করা হলেও কার্যত কিছুই হয়নি। সেই বিচারে মতাদর্শ সম্পর্কে যে
কোনো স্তরের নেতৃত্ব কতটা সচেতন ছিলেন, রূপায়নের প্রশ্নে কতটা সৎ ও আন্তরিক ছিলেন
সে প্রশ্ন দেখা দেয়।
এসব বাদ দিয়ে যদি নীতি ও মতাদর্শের কথা ওঠে তাহলে
আমার মনে পড়ছে চীনের একাদশ পার্টি কংগ্রেসের পর সেখানকার কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছিল, ‘ কমরেড মাও-সে-তুং ওয়াজ রাইট বাট
আওয়ার সেন্ট্রাল কমিটি ওয়াজ রং’। একথা পিপলস ডেমোক্রেসিতে আমি পড়েছি। পুরো পার্টি নেতৃত্ব
দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের একথা প্রসংগে অন্য আলোচনা এখানে অপ্রাসংগিক। চিনের
সমস্যার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি একা মাও-সে-তুং কে দায়ী করেননি। এটাই তো হওয়া উচিত।
আমাদের এখানে পার্টির অভ্যন্তরে যাঁরা নেতৃত্ব বদলের কথা বলছেন তাঁরা সে ‘বদল’ থেকে নিজেদের বাদ রাখছেন কেন ? আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁদের এসব কথার নেপথ্যে মানুষের
স্বার্থ চিন্তা নেই, পার্টির স্বার্থ চিন্তা নেই, আছে অন্য কিছু অথবা ভ্রান্তি।
[ চলবে ]
আপনার মন্তব্যের জন্য নিচে "No Comments:" Click করুন।