ভেবেছি ১২-১২-২০১৩
এবং ১৩-১২-২০১৩ তারিখের বাংলা, ইংরেজি সব কটি খবরের
কাগজ সযত্নে বাঁধিয়ে রাখব।
কেন?
কারণ আমি হতাশ, চূড়ান্ত হতাশ........................।।
'সমকামিতা' নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর শীর্ষস্থানিয় নেতা নেত্রী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের
প্রতিষ্ঠিত বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ,
"আমি হতাশ", "আমি চূড়ান্ত হতাশ"
ইত্যাদি অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টকে অপরাধী করে তুলেছেন। বলছেন ভারতবর্ষকে পেছন দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে। এমন
কথাও উঠে এসেছে "এবারে ওদের (সমকামীদের) পাশে দাঁড়ানোর সময় এসেছে"।
ঘেন্নায়, রাগে, ক্ষোভে, বিস্ময়ে আমার গা গুলিয়ে উঠছে। বমি
পাচ্ছে। ভেবেছিলাম আরও অন্য বিষয়ের মতই এটা নিয়েও কিছু বলব না, কিন্তু পারলামনা। একমাত্র
দেখলাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কপিল সিব্বাল এবং
আরও দুয়েকজন ভাল বলেছেন। আর
যাকে আমাদের দেশের প্রধান হিসেবে মাঝে মাঝেই ভাবা হয় তার কথা শুনেতো দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল।
সমকামিতার সমর্থনে
এরকম অনুভূতি কারো থাকতেই পারে। কথাটা
প্রথমেই স্বীকার করলাম কারণ তা না হলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধের দায়ে পরতে হতে
পারে। যারা সমাজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে বলে ভাবছেন, সংস্কৃতি ও সম্পর্কের অবক্ষয় হবে বলে ভাবছেন, বিরুদ্ধে আছেন, চুপ করে আছেন, নির্লিপ্ত আছেন তাঁদের নিয়ে ভয় নেই কারণ তাঁরা এ অভিযোগ আনবেন না।
একটি সুপরিচিত
ইংরেজি দৈনিকে দেখলাম ভারতের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মাত্র ৭-১৩% সমকামী। প্রকৃত জনসংখ্যার হিসেবে সংখ্যাটি আরও অনেক কম। তাহলে
কী দাঁড়াল?
৭০% এর কাছাকাছি
মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে তাদের নিয়ে নেতা নেত্রী উচ্চবর্গের মানুষদের বিন্দুমাত্র
হতাশা নেই, উদ্বেগ নেই।
প্রায় সম সংখ্যক
মানুষের অনাহারের পাশাপাশি পানীয় জলের অভাব, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার অভাব, শিক্ষার অভাব এসব
নিয়ে তাঁদের কোন হতাশা নেই, ক্ষোভ নেই।
ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু
করা খাদ্য সুরক্ষায় মাত্র ২৭০০০ কোটি টাকা খরচ হবে আর পেট্রোল ও সারের ভর্তুকিতে ১,৬৫,০০০ কোটি টাকা, সোনা হীরে ইত্যাদি আমদানিতে ৫৭,০০০ কোটি টাকা শুল্ক ছাড়া দেয়া হবে তা নিয়ে
হতাশা নেই, উদ্বেগ নই, ক্ষোভ নেই।
দূর্নীতি, স্বজন পোষণ, অপরাধীকে আড়াল করা, দেশ পরিচালনা ও আইন তৈরি করার দায়িত্ব খুনি, চোর, ডাকাতদের হাতে তুলে
দেয়া নিয়ে হতাশা নেই, ক্ষোভ নেই, প্রতিবাদ নেই, রাতের ঘুম নষ্ট হওয়া
নেই।
শিক্ষা ও অর্থাভাবে
দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা যারা করাতে পারেন না তাঁদের সেই অপারগতা নিয়ে হতাশা নেই। চিকিৎসকদের একাংশের অনৈতিকতা নিয়ে, নৃশংসতা নিয়ে হতাশা নেই, ক্ষোভ নেই। ওষুধ কোম্পানিদের অপরিসীম মুনাফা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই।
এত সব নেইয়ের কথা
অনেক। প্রাকৃতিক এবং অ-প্রাকৃতিক নেইতে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সময় নেই
কিন্তু গুটিকয়েক মানুষের অদ্ভুত আচরণের পাশে এসে দাঁড়ানোর জরুরি সময় এসেছে।
সুপ্রিম কোর্ট
অন্যায় কী করেছে ? বিচার বিভাগ কি আইন তৈরি করবে? বিচার বিভাগ কি আইন বাতিল করবে? হাই কোর্টের রায় তো আইন তৈরি করারই সমতুল্য। সুপ্রিম
কোর্ট বলেছে, 'আইনসভা ঠিক করুক এ আইন তারা রাখবে কি না'।, এর পরে আর হাই কোর্টের রায় টেঁকে না।
হিমঘরে, হিমঘরের বাইরে বা গুদামের বাইরে খোলা জায়গায়
রোদে বৃষ্টিতে আবর্জনায় সুচিন্তিত চূড়ান্ত অবহেলায় উদাসীনতায় অনীহায় লক্ষ লক্ষ টান
খাদ্যা শস্যা নষ্ট হলে যখন সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেন, 'গরিব মানুষের মধ্যে সেগুলো বিনা মূল্যে বিলি করতে হবে' কিন্তু সরকার যখন সে আদেশ মানতে প্রকাশ্যে অস্বীকার করেন তখন সেই অমান্যতা, অবহেলা, উদাসীনতা নিয়ে এঁরা কেউ হতাশ হন না।
বাকি সকলের ব্যক্তি
স্বাধিনতার প্রশ্ন নিয়েও অনেক কথা বলা যায় কিন্তু তাতে আবার আজকে যারা হতাশায়
ক্ষুব্ধ, পাশে দাঁড়ানোর জরুরি
প্রয়োজন উপলব্ধি করছেন তাঁদের গোঁসা হবে।
এখন নয়, সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরনোর পরে নয়, সমকামীদের নিয়ে নয় আমি হতাশ প্রতিবন্ধী মানুষদের যথেষ্ট সুযোগের অভাবে। আমি হতাশ আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষদের প্রতি ধারাবাহিক বঞ্চনা নিয়ে। আমি হতাশ ওপরের কারণগুলো নিয়ে। আমি
হতাশ ক্ষমতাসীন আর উচ্চবর্গের মানুষেরা দেশটাকে টেনে হিঁচড়ে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে তা
দেখে।
আমি চূড়ান্ত হতাশ
আমাদের ক্ষোভে, আমাদের হতাশায়, আমাদের প্রতিবাদ কোন ফল হয় না দেখে।
স্বাধীনতার পরেপরেই
আমার জন্ম। এই চূড়ান্ত হতাশা নিয়েই মঙ্গল অভিযাত্রী ভারতে আমার মৃত্যু। থেকে যাবে আমার হতাশার সুদীর্ঘশ্বাস।
-2-
কোন কোন পাঠকের
বুঝতে একটু ভুল হয়ে গেল বলে মনে হচ্ছে। তাঁরা বলছেন 'সমকামিতা' নিয়ে লিখতে গিয়ে অন্য বিষয়ের উত্থাপনের ফলে এটি 'গরুর রচনা'-র মত হয়েছে। এ জন্য স্পষ্ট করে দিই যে, আমি এখানে 'সমকামিতা' নিয়ে বা অন্য বিষয়গুলো নিয়েও কোন নিবন্ধ লিখিনি। তাই
সেগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখার দায়বদ্ধতাও নেই। আমার কথার মূল বিষয় হ'ল, সমকামিতা নিয়ে
আইনসভায়, বিচারসভায় আলোচনা
হোক, প্রাণী বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী যথাযথ
গুরুত্ব দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ সুফল-কুফল আলোচনা করুন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন সেটা
সবাইকেই মেনে নিতে হবে। তাঁরা
বলুন যে তাঁরা আলোচনা করবেন। কপিল
সিব্বাল, শীর্ষেন্দু
মুখোপাধ্যায়, বিমান বোস এমন আরও
দুয়েক জন সেকথা বলেছেন। কিন্তু
বাকিরা যে ভাবে "হতাশা" "চূড়ান্ত হতাশা" "পাশে দাঁড়ানোর
সময় এসেছে" এসব অভিমত ব্যক্ত করেছেন তাঁদের সেই চটজলদি অতি হতাশার অপ্রয়োজনীয়
প্রকাশ সমাজ জীবনে দুরকমের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। এঁরা
সেই পরিমাপ রক্ষা করে ঠিক কথাটা যা অত্যন্ত সহজ ছিল তা বলেননি। আমি তাঁদের ভ্রান্তি নিয়ে বলতে চেয়েছি।
আমাদের দেশে
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং আইনি বহু আলোচনা সর্বাগ্রিধাকার পায় এহেন হতাশা প্রকাশের এবং
অগ্রাধিকার ভিত্তিক আলোচনার যেগুলোর সমাধান না হলে আশু সমূহ বিপদ। মণিপুর থেকে মুর্মু, পরমাণু থেকে শস্যানু
সব কিছুই সে তালিকায় থাকে। নারী
নির্যাতনও স্থান করে নিয়েছে এবং আশু আলোচনার দাবী রাখে। সে
সবে চূড়ান্ত উদাসীনতা, চূড়ান্ত অবহেলার বিরুদ্ধে আমার
অভিযোগ, আমার প্রতিবাদ।
হিমঘরে কিংবা গুদামে
লক্ষ লক্ষ টন খাদ্যশস্য পচে নষ্ট হয়ে গেলে সুপ্রিমে কোর্ট যখন রায় দেয় সেগুলো
বিনামূল্যে বিলি করার তখন কেউ এই চূড়ান্ত অবহেলা, চূড়ান্ত উদাসীনতা এমনকি চূড়ান্ত অবাধ্যতা ও অনীহা যা কার্যত প্রকাশ পায় তা
নিয়ে কাউকে ক্ষুব্ধ হতে দেখিনা। বরং
সুপ্রিম কোর্টের রায় না মানার প্রবণতা দেখি।
হতাশা এবং ক্ষোভ কোন
বিষয়ে কখন কতটা প্রকাশ করতে হবে তা এঁদের জানা উচিত, বোঝা উচিত, সক্রিয় হওয়া উচিত। আমার লেখার এটাই মূল প্রতিপাদ্য। আশাকরি
আমাদের দেশের এই নেতৃস্থানীয় ও নানা গোয়ালে ঠাঁই অর্জন করে নেয়া 'গরুর কুলের' রচনা যদি হয়ে থাকে তবে তা ভালই হয়েছে।
এবারে 'সমকামিতা' নিয়ে একটু বলি। একদিকে বলা হচ্ছে এটা একটা আধুনিক প্রবণতা। আর
এ প্রবণতা মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ আধুনিকতা 'অধুনা'র আধুনিকতা, 'অধুনা' থেকে 'আধুনিক'। 'গুণমানে উন্নত' বলে 'আধুনিক' নয়। তাহলে মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ যে কোন 'আধুনিক' বিষয়কে কেন্দ্র করে আন্দোলন হবে এবং তার আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে? অন্যেরা পালটা আন্দোলন করলে কী হবে?
আমার মতে এ ধরনের
বিষয়ে সামাজিক বা আইনি স্বীকৃতির ঔচিত্য বিচারের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্ট বা
আইনসভারও নয়। বিচারের দায়িত্ব থাকা উচিত সম্পৃক্ত ক্ষেত্রগুলির বিজ্ঞানীদের ওপর।
আমি আবার দৃষ্টি
আকর্ষন করছি যে বর্তমান পোষ্টে এসব কোন কিছুই আমার মূল কথা নয়। আমার কথা হ'ল দেশের নেতারা এতেই হতাশায় ভেঙে পড়ছেন তবে দেশ চলবে কী করে ? :) এদের ধিক্কার।
No comments:
Post a Comment