সদ্য ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হ'ল বিহারের প্রাক্তন
মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের জেল।
প্রায় কুড়ি বছর হ'ল ভুষি কেলেঙ্কারীর মামলা চলেছে, এতদিন
পরে রায় বেরোল, জেল হ'ল। সত্যিকারের জেল। এবারেরটা সত্যিকারের জেল
বললাম কেন ? এর আগেও দুবার তার জেল হয়েছিল দুর্নীতির মামলায়। ভুষি
কেলেঙ্কারী মামলায় প্রথমবার যখন জেল হয় তখন তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। জেলে
যাওয়ার আগে তিনি তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রী করে দিয়ে পরদিন জেলে
গেলেন এবং জেল থেকেই রাবড়ি দেবীর মারফত তিনিই রাজ্যপাট চালাতেন। তারপর
হিসেব বহির্ভূত অর্থের দায়ে জেল হয়। কিন্তু এ দুবারের একবারও
তাকে আসল জেলে যেতে হয়নি, তার বদলে তাঁকে রাখা হয়েছিল জেলাশাসকের অতিথি শালায়। আর এবার
যেতে হয়েছে সত্যিকারের জেলে।
গত কুড়ি বছরে তিনি দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। ভারত সরকারের রেলমন্ত্রী হয়েছেন এবং রেলদপ্তরে তাঁর
"সাফল্য"-এর ব্যাখ্যা ও দিকনির্দেশ আলোচনার জন্য হার্বার্ড
ইউনিভারসিটিতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
এই কুড়ি বছরে মানুষ এটা বিশ্বাস করেননি যে কেলেঙ্কারীর দায়ে এদের জেল হতে পারে। বরং
উল্টোটাই বিশ্বাস করেছিল। তাদের বিশ্বাস করানো গেছিল যে, এসব
কেলেঙ্কারী আর দূর্নীতির অভিযোগ ও মামলা সবই চিরাচরিত রাজনীতির ষড়যন্ত্র, আসলে
মিথ্যা মামলা। সাধারণ মানুষের মনে এই ধারনা গেঁথে দেওয়া হয়েছিল যে, এঁরা
যখন যা খুশি তাই করতে পারেন, কেউ টিকিটি ছুঁতে পারবেনা।
আমাদের দেশে আইন প্রণেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত দূর্নীতির বিস্তার
ঘটেছে, গভীরে তার শেকড়। অজস্র মামলা হয়েছে, সকলের
না হোক কারো কারো শাস্তি হয়েছে কিন্তু সমুদ্রের নিচে পাহাড়ের সিংহভাগই এখনো জলের
নিচে, কিছু করা যায়না। আইনসভাতেও শতাধিক সদস্য
দুর্নীতি, খুন, জখম ইত্যাদি নানা রকম মামলায় জড়িত। চলছে
টাকার খেলা, ক্ষমতার খেলা। দুর্ভোগ ভুগছে নিচের তলার
সাধারণ মানুষ। এদেরই রক্ষা করার জন্য সরকার আইনসভায় বিল এনেছিল, পাশ
হয়েছিল।
দিল্লির ধর্ষন ও হত্যা মামলায় প্রথম দিকে সরকার গা নাড়াতে না চাইলেও মানুষের
চাপের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছিল। আমাদের রাজ্যে রিজওয়ানূর, পার্ক ষ্ট্রীট থেকে শুরু করে
গ্রাম পঞ্চায়েত, পুলিশ চৌকী, রাস্তার ট্রাফিক গার্ড থেকে শুরু করে আইনসভা ও তার সদস্য এমনকি
মন্ত্রীবর্গ পর্যন্ত দূর্নীতির জাল বিস্তার হয়েছে।
অজস্র এমন উদাহরণ আছে যেখানে রাজনৈতিক বা জোট সমর্থন থাকলে কোনো
তদন্ত বা মামলা হয়না কিন্তু সেটা না থাকলে ও কথা না শুনলেই তদন্ত, মামলা
গ্রেপ্তারি, জেল-বন্দি ইত্যাদি ঘটে। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিচারের এই কাল বিলম্ব এবং অন্যায় দূর্নীতির অন্যান ক্ষেত্রে বিচারের কাল বিলম্ব, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক
প্রশ্রয় এসবের ফলে এই দূর্নীতিকরা মানুষকে নিজেদের বশে আনছেন, যা খুশি
তাই করছেন।
সার্বিক ব্যাপ্তির বিচারে দ্রুত বিচার ও শাস্তি প্রদানের এমন
ব্যাবস্থা সংবিধানে রাখতে হবে যা কোনো অজুহাতেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। কোনোরকম
ভাবেই আইনসভা, ন্যায়ালয় ও আইন রক্ষকদের যাতে প্রভাবিত করা না যায় তার যথাযথ
ব্যাবস্থা সংবিধানে রাখতে হবে।
তাই..................
No comments:
Post a Comment